Saturday, 15 August 2020

শ্রীল প্রভুপাদ ব্যাসপূজা শ্রদ্ধাঞ্জলী, ২০২০


শ্রীল প্রভুপাদ পদে করি বারংবার 

সহস্র অযুত লক্ষ্য কোটি নমস্কার ।।

তব আবির্ভাব তিথির পুনঃ আবির্ভাব 

কিরূপে জানাব মোর নিকৃষ্ট স্বভাব ।।

জড়বদ্ধ-মায়ামুগ্ধ-ক্লেশক্লিষ্ট আমি 

বাহিরে বিরক্তভাব হৃদে সদা কামী ।।

কত-শত-কোটি জীবের অজ্ঞান-অন্ধকার 

তবকথার তরবারি করেছে ছারখার ।।

কিন্তু আমি পাপী ছার জগতে বিশেষ 

অত কথা শুনিয়াও নাহি ভাবলেশ ।।

তুমি কত যত্ন করি বোঝাও বারেবার 

আমি তত নির্লিপ্ত হই থাকি নির্বিকার ।।

তব কথার নাহি দোষসঞ্জবনী সুধা 

ছিদ্রযুক্ত পাত্রে বারি নাহি রহে কদা ।।

সাধনেতে উদাসীন সাধ্যে নাহি রতি 

শুষ্ক তর্কে টানাটানি সদাই নষ্টমতি ।।

কবে দৃঢ়ব্রত লইয়া করিব আচার 

বুঝিব বিচার তব বলিষ্ঠ প্রচার ।।

পদ্মমুখ মূর্খ অতিতোমার পদতলে 

নির্লজ্জ হইয়া নিজ দুঃখগাঁথা বলে ।।


বিনয়াবনত,
পদ্মমুখ নিমাই দাস

শ্রীধাম মায়াপুর, ১৩ই আগস্ট, ২০২০

Wednesday, 8 April 2020

শ্রীল গুরুদেব ব্যাসপূজা শ্রদ্ধাঞ্জলি - ২০১৭

সুবিশাল, সুগভীর, সংসার সমুদ্র
ভয়ানক তিমিঙ্গল, সুউচ্চ তরঙ্গ ।।

দুর্লভ মনুষ্যদেহ, সুদৃঢ় তরণী  
অনুকূল বায়ু তাতে ভগবানের বাণী ।।

শ্রীগুরু কাণ্ডারি কৃপা করিয়া অপার  
প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন করিবেন পার ।।

কিন্তু জলের তৃষ্ণা আমার প্রবল এখন  
তরী হৈতে ঝাঁপ দিতে চাহি অনুক্ষণ  

রঘুনাথ দাসে শিক্ষা আছিল গােরার  
অন্তরেতে নিষ্ঠা বাহ্যে লােক-ব্যবহার ।। 

আমার চরিত হয় সদা বিপরীত ।
অগ্নি পানে ধায় কীট ভুলি নিজ হিত ।। 

বাহিরেতে নিষ্ঠা মাের দেখয়ে সকল ।। 
অন্তরেতে বিষয় প্রতি আসক্তি প্রবল ।। 

বিষয়ে আবিষ্ট চিত্ত স্থির নহে কভু
প্রভুত্ব করিতে চাহে ভুলি মহাপ্রভু ।। 

নাম, ধাম, সাধু-সঙ্গ, সেবা অধিকার  
তব অহৈতুকী কৃপায় মিলেছে আমার ।। 

কিন্তু কপটতা পূর্ণ আমার হৃদয়
রুচিহীন, অতএব অনর্থ আলয় ।। 

অহৈতুকী কৃপা কবে হইবে দাসে  
নিষ্কপট-কৃষ্ণসেবা করিব উল্লাসে ৷৷

শ্রীগুরু চরণে রতি সেই মহাধন
পাইবারে পদ্মমুখ করে নিবেদন ।।

আপনার অযােগ্য শিষ্য, 
পদ্মমুখ নিমাই দাস

Tuesday, 24 March 2020

ভাবুন, ভাবুন, ভাবতে থাকুন...

হ্যাঁ আপনাকে বলছি, দয়া করে মিনিট সময় দিয়ে পড়ুন

স্মৃতির পাতায় একটু খুঁজে দেখার চেষ্টা করুন তো, আপনিই কি সেই, যে ভগবানের কাছে এই অজুহাত দিত যে, “হে ভগবান! আমি তো তোমার ভক্তি করতে চাই, কিন্তু কি আর করব, তুমি তো আমার অবস্থা জানোই। তুমি তো দেখতেই পাচ্ছ যে, আমি আমার দায়িত্ব কর্তব্য নিয়ে কত ব্যস্ত। সারাদিন কত কাজ। কত দায়িত্ব। কত চাপ। কর্মক্ষেত্রে চাপ, পড়ালেখার চাপ, সন্তানের প্রতি দায়িত্ব পালনের চাপ, পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালনের চাপ, আত্মীয় স্বজন-বন্ধু-বান্ধব-পাড়া প্রতিবেশীদের প্রতি দায়িত্ব পালনের চাপ, সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালনের চাপ। আমি এত্তো ব্যস্ত। আমার এত সময় কোথায় যে আমি তোমার ভক্তি করব ? যখন একটু ফ্রি হব, এত্তো সব দায়িত্বের চাপ থেকে হালকা হব সেদিন তোমার ভক্তি করব।
যদি আপনি এরকম চিন্তা করে থাকেন তবে আপনার জন্য ভগবান এখন অফুরন্ত সময় বের করে দিয়েছেন। ঘরে বসে ইচ্ছেমত ভগবানের নাম জপ করুন, গীতা-ভাগবত পড়ুন। সময় এখন আপনার হাতে।

কিংবা যখন কোন ভক্ত আপনার কাছে গীতা-ভাগবত নিয়ে এসেছিল, আপনি কি তাঁকে এরকম কিছু বলেছিলেন যে, “এসব শাস্ত্র-টাস্ত্র পড়ার আমার প্রয়োজন নেই।তাহলে জেনে রাখুন আজ এই সংকটময় দিনে এসব অপ্রাকৃত শাস্ত্রগ্রন্থই আপনাকে প্রকৃত দিশা দেখাবে। "কেন আমরা এই করোনা ভাইরাস রোগের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছি? আমাদের এই সুখের পৃথিবীতে কেন এই কালবৈশাখীরূপী করোনা ভাইরাস এল? আমি তো কোন পাপ করিনি, তবে কেন আমাকে এত দুঃখ পেতে হচ্ছে? ভগবান কি আদৌ আছেন? যদি তিনি থেকেই থাকেন, তবে কেন এত দুঃখ কষ্ট?” আপনার মনে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই প্রশ্নগুলির উত্তর যা কিনা আপনাকে গুগুল বা উইকিপিডিয়াও দিতে পারবে না, সেগুলি কিন্তু আজ আপনি এই বৈদিক শাস্ত্রগুলি থেকেই পাবেন।

কিংবা যখন কেউ আপনাকে হরিনাম করতে বলেছিল তখন আপনি তাঁকে বলেছিলেনবসে বসে মালা টানার থেকে আমার আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। আমি পরিবার-সমাজ-দেশের প্রতি দায়িত্ববান একজন মানুষ। আমি আমার কর্ম করছি। আমার কর্মই আমার ধর্ম। আলাদা করে ধর্ম-টর্ম করার প্রয়োজন আমার নেই।
যদি আপনি সত্যিই এরকম বলে থাকেন, তবে আজ আপনার সব দায়িত্বগুলিকে ছাপিয়ে গিয়ে ঘরে বসে একান্তে ভগবানের নাম করার সময় আপানার এসে গেছে। হ্যাঁ, এটা ঠিক, আপনি একজন আদর্শ দায়িত্ববান ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু আজ যদি কয়েকদিন আপনি সবার সমক্ষে হাঁচি কাশি দেন বা সামান্য জ্বরের লক্ষণ প্রকাশ করেন, তবে সেই পরিবার-সমাজ-দেশ সবাই মিলে আপনাকে গৃহ বন্দি করে রাখবে। আপনার স্ত্রী-পুত্র-পিতা-মাতা ভয়ে আপনার কাছেই আসবে না। আপনি যদি এই করোনায় মারা যান, তবে তারা কেউই আপনার মৃতদেহকেও স্পর্শ করবে না। এতদিন যে আত্মীয়, আদর্শ, আভিজাত্য অর্থরূপী অনর্থগুলির বড়াই আপনি করে এসেছিলেন, প্রকৃতির কঠোর নিয়মের একটি মৃদু হাওয়াই সবকিছু নড়বড়ে করে দিয়েছে। এখনো কি আপনার বোধদয় হয়নি? এখনো কি আপনি ভাবেন, ", আমি তো স্বাধীনচেতা মানুষ। আমি যা ইচ্ছে তাই করতে পারি। যা ইচ্ছে খেতে পারি। যেখানে ইচ্ছে সেখানে যেতে পারি। আমার তো কোন টাকা-পয়সার অভাব নেই, আর সেজন্য আমার আশেপাশে ঘুরঘুর করার লোকেরও অভাব নেই। আমি একডাক দিলে পাঁচ মিনিটের মধ্যে একশত লোক এসে জড় হয়ে যাবে। পৃথিবীর যত ভাল ভাল ডাক্তার আছেন তারা আমার কাছে আছেন। আমার ভয়ে বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খায়।" কিন্তু ভায়া, সমস্যাটা হচ্ছে যে, করোনা ভাইরাস তো আপনাকে ভয় পাবে না। আপনি হয়ত ভাবছেন, "হ্যাঁ, তো বড় ভাবার বিষয়।" হ্যাঁ ভাবুন, ভাবুন, ভাবতে থাকুন। ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না।